গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ সকল কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে
গতকাল বিকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কাঠ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তারা ৪টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে। গ্রামীণ ফেব্রিক্স নামের একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছেন। শ্রমিকদের হামলায় ও মারধরে সাংবাদিক ও পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানায় রয়েছে। ওই কারখানাগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গত কয়েক মাস ধরে এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই সরকার ঋণ দিয়ে শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করে।
গত ১৫ ডিসেম্বর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬ কারখানা বন্ধ করা হয়। এতে শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েন। এরপর থেকে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনসহ বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
গত মঙ্গলবার বিকালে ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শ্রমিক বকেয়া পাওনা পরিশোধ ও ব্যাংকিং সুবিধাসহ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় সানসিটি মাঠে গণসমাবেশ করেন। সমাবেশে বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সরকারকে সময় দিয়ে আল্টিমেটাম ঘোষণা দেয় শ্রমিকরা। //
বুধবার বিকাল ৩টার দিকে শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চক্রবর্তীর মোজার মিল এলাকায় কাঠ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা টিআর ট্রাভেলস সার্ভিসসহ চারটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করেন। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার সময় বিক্ষোভকারীদের বাঁধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করে শ্রমিকরা।
তারা সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ও ক্যামেরা-মোবাইল ফোনও ভাংচুর করে। ঘটনার সময় পুলিশের কয়েকজন সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা, এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা ও হাজার হাজার যানবাহন ।//
আন্দোলনকারী আনোয়ার হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের কেউ রাস্তায় নামতে চায় না। কিন্তু বাধ্য হয়ে ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছি। আমরা এখন বাসা ভাড়া দিতে পারছি না। পরিবারের জন্য বাজার করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পরিবহন শ্রমিক আব্দুল খালেক জানান, শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে মহাসড়ককে বেছে নেয়। তারা যানবাহন ভাঙচুর করেন। এতে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারাদিন রাস্তার মধ্যে দিন কাটাতে হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন জানান, তেঁতুইবাড়ি এলাকার একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিইপিজেড, সারাবো ও জয়দেবপুর স্টেশনের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এর আগে কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুন নেভাতে যাওয়ার পথে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাঁধা দেয় শ্রমিকরা।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলন গাজীপুর এলাকার হলেও সাভার ও আশুলিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ কোনাবাড়ি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু তালেব জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে। রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক শ্রমিকদের অবরোধ ও বিক্ষোভ চলছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
আজ এই পর্যন্তই
ভিডিওটিতে লাইক দিন,share করুন এবং এইরকম ভিডিও আরো পেতে চাইলে চ্যানেলটি subscribe করে আমাদের সাথে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন